খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির গঠনতন্ত্রের আলোকে নির্বাচিত কমিটির বয়স ১২ মাস। অথচ ৫ আগস্ট পরবর্তী এডহক কমিটি পার করেছে ১৬ মাস। কবে ভোট তা নিয়েও রয়েছে অনিশ্চয়তা। পরাজয়ের ভয়ে নানা অজুহাতে ভোট পেছানো হচ্ছে। এমনটাই দাবি একাধিক সংগঠনের। দুটি পরস্পর বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির সমর্থক নেপথ্যে থেকে ঐক্য হয়েছে। রাজনীতির ভাষায় যার নাম বিরোধিতার ঐক্য। সেই আতঙ্কে পরাজয়ের ভয়ে সমিতির ক্ষমতাসীনরা অজুহাত সৃষ্টি করে নির্বাচন পেছাচ্ছেন। ফলে নির্বাচন নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা ।
৫ আগস্ট পূর্ব এ সমিতির সভাপতি ছিলেন সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম। আওয়ামী লীগের ক্ষমতাচ্যুতির পর ৬ আগস্ট ৫ সদস্যের একটি এডহক কমিটি গঠন করা হয়। ২০২৪ সালের ২০ অক্টোবর তফসিল ঘোষণা হয়। মনোনয়নপত্র গ্রহণের শেষ দিনে ২৭ অক্টোবর ‘সাধারণ সভার মাধ্যমে’ নির্বাচন স্থগিত করা হয়। ১৫ মাস পরে ওই এডহক কমিটি আবারও তফসিল ঘোষণা করে গেল অক্টোবর মাসে কথিত সাধারণ সভার মাধ্যমে নির্বাচন স্থগিত করেছে।
স্বতন্ত্র আইনজীবী পরিষদের সভাপতি প্রার্থী বেগম আক্তার জাহান রুকুর অভিযোগ, “নাথিং সুড বি আনচ্যালেঞ্জড। গত ১ বছর ৪ মাসে বর্তমান এডহক কমিটি যে নাটক করেছে তাতে এদের আর বিশ্বাস করা যায় না। এরা নব্য ফ্যাসিস্ট। এডহক কমিটিকে পদত্যাগ করতে হবে। কথা পরিষ্কার।”
জামায়াত সমর্থিত খায়ের-জাকির পরিষদের সভাপতি প্রার্থী আবুল খায়ের অভিযোগ করেন, “এই এডহক কমিটি দুই দুই বার নির্বাচন দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তলবি সভায় কথা বলতে দেওয়া হয়নি। অগঠনতান্ত্রিকভাবে নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। জামায়াত ব্যক্তি স্বার্থ থেকে সাধারণ আইনজীবীদের স্বার্থকে বড় করে দেখে। যে কারণে আমরা এ এডহক কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি গঠনের মাধ্যমে দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি।”
এ এম এম মোমেনুজ্জামান টুলু অভিযোগ করেন, “পূর্বের সময় এবং বর্তমান সময় এক না। এডহক কমিটিতে যারা বিতর্কিত তাদের অপসারণ করে এবং ঘুণে ধরা নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে একেবারে নতুন আঙ্গিকে ভোট দিতে হবে।”
বাংলাদেশ ল’ইয়ার্স কাউন্সিল, খুলনার সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম পান্না অভিযোগ করেন, ৫ আগস্ট পরবর্তী সকল দল এবং সকলের আলোচনার ভিত্তিতে এডহক কমিটি গঠন করা হয়েছিল। আসন্ন নির্বাচনে ইতোমধ্যে দুটো প্যানেল ঘোষণা হয়েছে। বিএনপি এখনও প্যানেল দেয়নি। ধারণা করা হচ্ছে তাদের অভ্যন্তরীণ অবস্থা দুর্বল এবং হেরে যাওয়ার ভয়ে নির্বাচন দিতে ভয় পাচ্ছে। তাছাড়া এডহক কমিটির দুই এক জন অদৃশ্য কারণে নির্বাচন দিতে চাচ্ছে না।
আইনজীবী সমিতির বর্তমান এডহক কমিটির সদস্য আওছাফুর রহমান অভিযোগ করেন, “জামায়াত অর্থাৎ বাংলাদেশ ল’ইয়ার্স কাউন্সিলের কাছে হেরে যাওয়ার ভয়ে বিএনপি নির্বাচন দিতে চায় না।”
স্বতন্ত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী নিহির কান্তি ঘোষ অভিযোগ করেন, “আমরা নতুন এডহক কমিটি গঠন করব। পুরাতন এডহক কমিটি যদি ক্ষমতা হস্তান্তর না করে আমরা বাধ্য করব। আর নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের মাধ্যমে ২০২৫ সালেই নির্বাচন সম্পন্নে তাদেরকে বাধ্য করা হবে।”
আইনজীবী সমিতির সদস্য সচিব নুরুল ইসলাম রুবা আন্দোলনকারীদের অভিযোগ সঠিক নয় উল্লেখ করে বলেন, “৭০ জন স্বাক্ষর করে কোন কথা বললে আমরা তাই করতে বাধ্য। সেখানে ৯৪ জন স্বাক্ষর করেছে এবং সাধারণ সভায় নির্বাচন স্থগিতের সিদ্ধান্ত হয়েছে।” আমরাতো নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছি দাবি করে তিনি বলেন, “যারা নানা অভিযোগ তুলছেন তাদেরকে অনুরোধ করবো আবারও রিকুজেশন দিয়ে সভা করেন, সকলের মতামতে নির্বাচন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।”
নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল আজিজ বলেন, “আইনজীবী সমিতি থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে নির্বাচন স্থগিত করার। তাই বন্ধ রাখা হয়েছে। এর আগে গতবছরও চিঠি দেওয়া হয়েছিল নির্বাচন স্থগিতের।” কবে নির্বাচন হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, “বার যখন বলবে তখন।”
খুলনা গেজেট/এনএম

